খেজুর পুষ্টিতে ভরপুর। আমাদের দেশে রোজার সময় ইফতারে অনেকে খেজুর খেলেও বাকি বছর নিয়মিত খান না। কিন্তু দিনে মাত্র দুটি খেজুর খেলে আপনার ত্বক থাকবে তারুণ্যে তরতাজা। পাবেন স্বাস্থ্যকর আরও নানা সুবিধা।
খেজুরে আছে প্রচুর ফাইবার বা আঁশ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এটি ফাইটো বা উদ্ভিদ হরমোনসমৃদ্ধ। দিনে দুটি খেজুর খেলে তা বিভিন্ন রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমায়, হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং মলত্যাগে সাহায্য করার মধ্য দিয়ে শরীর থেকে বর্জ্য বের করে দিতে ভূমিকা পালন করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে এই ৩ ধরনের খেজুর খান
অনেকের ধারণা, মিষ্টিজাতীয় হওয়ায় খেজুর ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে বরং উল্টো, খেজুর আদতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভালো ভূমিকা রাখে।
খেজুরে আছে প্রচুর ক্যালরি। এটি শক্তির ভালো উৎস। সব বয়সের মানুষই খেজুর থেকে এর নানা পুষ্টিগুণ গ্রহণ করতে পারেন। এখন চলুন দেখে নেওয়া যাক, খেজুর কেন এত উপকারী।
ক্ষতিকর বর্জ্য নিষ্কাশন
গবেষণায় দেখা গেছে, খেজুরে প্রচুর দ্রবণীয় আঁশ থাকে। এক সপ্তাহ ধরে দিনে দুটি খেজুর খেলে তা হজম ও সঠিকভাবে মলত্যাগে সাহায্য করে। খেজুরের দ্রবণীয় আঁশ মল নরম করে। অন্যদিকে এ ফলের অদ্রবণীয় আঁশ মলের পরিমাণ বাড়ায়। এভাবে খেজুর কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় আর শরীর থেকে ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে।
রোগ থেকে বাঁচার রক্ষাকবচ
খেজুরে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট কোষকে ফ্রি র্যাডিক্যালের হাত থেকে বাঁচাতে রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। ফ্রি র্যাডিক্যাল, অর্থাৎ মুক্ত আয়ন বা মুক্ত মৌল কোষকে ধ্বংস করে বিভিন্ন রোগ তৈরি করে। বলা হয়, একই ধরনের অন্য ফলের তুলনায় খেজুরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট বেশি থাকে। এতে ফ্ল্যাভোনয়েড, ক্যারোটিনয়েড ও ফেনোলিক অ্যাসিডও আছে। ফ্ল্যাভোনয়েড ডায়াবেটিস, আলঝেইমারস ডিজিজ ও কয়েক ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। এটি শরীরে প্রদাহ রোধে ভূমিকা রাখে। ক্যারোটিনয়েড চোখের অসুখবিসুখ হতে বাধা দেয়। ফেনোলিক অ্যাসিড হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়।
প্রেগন্যান্সি টেস্ট কখন করতে হয়? কীভাবে করবেন
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
মিষ্টিজাতীয় ও শর্করাসমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও ডায়াবেটিক রোগীদের খেজুর খেতে বাধা নেই; বরং এটি উপকারী। ২০২০ সালে পরিচালিত একটি জরিপে দৈবচয়ন ভিত্তিতে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ১০০ রোগীকে বাছাই করা হয়। তাঁদের ১৬ সপ্তাহ ধরে দিনে তিনটি করে খেজুর খেতে বলা হয়। পরে দেখা যায়, এসব রোগীর রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের (এলডিএল) পরিমাণ কমেছে। শুধু তা-ই নয়, তাঁদের ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল) বেড়েছে। খেজুর টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের হৃদ্স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। খেজুরের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় এটি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাও বাড়ায় না।
হাড় শক্ত করে
খেজুরে প্রচুর খনিজ থাকে। এর মধ্যে আছে কপার, ম্যাঙ্গানিজ ও সেলেনিয়াম। এসব পদার্থ হাড়কে শক্তিশালী করে। অস্টিওপরোসিসের মতো কঠিন রোগের হাত থেকে বাঁচাতে যুদ্ধ করে। কপার, ম্যাঙ্গানিজ ও সেলেনিয়াম সুস্থ হাড় গঠনে ভূমিকা রাখে।
ত্বককে তরতাজা রাখে
খেজুরে প্রচুর ফাইটো হরমোন বা উদ্ভিদ হরমোন আছে। এই হরমোন বলিরেখা প্রতিরোধ করে ত্বককে তরতাজা ও তারুণ্যে ভরপুর রাখতে সাহায্য করে। ফাইটো হরমোনের এই ভূমিকার কারণে এটি ত্বকের যত্নে বানানো বিভিন্ন প্রসাধনী তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এক গবেষণার অংশ হিসেবে ৫ শতাংশ খেজুরের বিচির নির্যাস দিয়ে ত্বকের লোশন তৈরি করা হয়। এই লোশন মধ্যবয়সী কিছু নারী তাঁদের চোখের চারপাশে দিনে দুবার করে পঁচা সপ্তাহ ব্যবহার করেন। পরে দেখা যায়, তাঁদের চোখের নিচের কালো দাগ অনেকটাই কমেছে। তাই ত্বক তরুণ রাখাসহ স্বাস্থ্যকর নানা সুবিধা পেতে দিনে দুটি খেজুর খেতে পারেন নির্দ্বিধায়।