Type Here to Get Search Results !

বাংলাদেশে জিকা ভাইরাস: ঝুঁকি, প্রভাব ও প্রতিরোধ

 

বাংলাদেশে জিকা ভাইরাস


জিকা ভাইরাস একটি মশাবাহিত রোগ, যা প্রধানত এডিস জাতীয় মশার মাধ্যমে ছড়ায়। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মতো এই ভাইরাসও এডিস এজিপ্টাইএডিস অ্যালবোপিকটাস মশার মাধ্যমে সংক্রমিত হয়। যদিও এটি মূলত আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা এবং এশিয়ার কিছু অঞ্চলে বিস্তার লাভ করেছে, বাংলাদেশেও এটির সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে।

জিকা ভাইরাস কী?

জিকা ভাইরাস ফ্ল্যাভিভিরিডি পরিবারভুক্ত একটি ভাইরাস, যা মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে সাধারণত হালকা জ্বর, শরীর ব্যথা, চোখ লাল হওয়া এবং ফুসকুড়ির মতো উপসর্গ সৃষ্টি করে। তবে গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক হতে পারে, কারণ এটি নবজাতকের মাইক্রোসেফালি (অসামান্য ছোট মাথা ও অসম্পূর্ণ মস্তিষ্ক বিকাশ) এবং অন্যান্য জন্মগত ত্রুটি সৃষ্টি করতে পারে।

বাংলাদেশে জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি

বাংলাদেশে জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ এখনো ব্যাপকভাবে ছড়ায়নি, তবে জলবায়ু পরিবর্তন, মশার বিস্তার এবং আন্তর্জাতিক ভ্রমণের কারণে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। ২০১৬ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) সতর্ক করেছিল যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো, বিশেষত বাংলাদেশ, জিকা ভাইরাসের জন্য উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।

২০১৭ সালে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ একটি গবেষণায় ঢাকা শহরের মশার মধ্যে জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করেছিল। যদিও তখনো এটি ব্যাপক সংক্রমণের রূপ নেয়নি, কিন্তু এটি বাংলাদেশে ভবিষ্যতে বড় ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকির ইঙ্গিত দেয়।

জিকা ভাইরাস সংক্রমণের উপায়

১. মশার কামড় – সংক্রমিত এডিস মশার কামড়ই প্রধান সংক্রমণের মাধ্যম।
2. গর্ভাবস্থায় সংক্রমণ – গর্ভবতী মায়েরা যদি সংক্রমিত হন, তবে এটি শিশুর মধ্যে ছড়াতে পারে।
3. যৌন সংস্পর্শ – আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্কের মাধ্যমেও ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে।
4. রক্ত সংক্রমণ – সংক্রমিত ব্যক্তির রক্ত গ্রহণের মাধ্যমেও এটি ছড়াতে পারে।

জিকা ভাইরাসের লক্ষণ

জিকা ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে সাধারণত নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখা যায় –

  • মৃদু জ্বর
  • ফুসকুড়ি
  • চোখ লাল হওয়া (কনজাংকটিভাইটিস)
  • মাথাব্যথা
  • পেশী ও গাঁটে ব্যথা
  • ক্লান্তি অনুভব করা

অনেক সময় এই উপসর্গগুলো এতটাই হালকা হয় যে আক্রান্ত ব্যক্তি বুঝতেই পারেন না যে তিনি সংক্রমিত হয়েছেন।

জিকা ভাইরাসের ঝুঁকি ও প্রভাব

বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য জিকা ভাইরাস একটি বড় স্বাস্থ্য ঝুঁকি হতে পারে। বিশেষত, ঢাকা ও অন্যান্য নগর এলাকায় এডিস মশার আধিক্য থাকায় সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি। যেহেতু জিকা ভাইরাস গর্ভবতী নারীদের জন্য বিশেষভাবে বিপজ্জনক, তাই এটি নবজাতকের জন্মগত ত্রুটির সংখ্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।

জিকা ভাইরাস প্রতিরোধ ও প্রতিকার

বর্তমানে জিকা ভাইরাসের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা বা টিকা নেই। তাই প্রতিরোধই হলো সবচেয়ে ভালো উপায়।

প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:

  1. মশা নিয়ন্ত্রণ – ঘরের আশপাশে পানি জমতে না দেওয়া, মশা নিধন ও নিয়মিত ফগিং করা।
  2. মশারি ব্যবহার – দিনে ও রাতে মশারির নিচে ঘুমানো।
  3. মশা প্রতিরোধী লোশন ও স্প্রে ব্যবহার – শরীরে মশা প্রতিরোধক লোশন ব্যবহার করা।
  4. ঢিলেঢালা ও পুরো হাত-পা ঢেকে রাখে এমন পোশাক পরা – যাতে মশা সহজে কামড়াতে না পারে।
  5. ভ্রমণের সতর্কতা – জিকা ভাইরাসপ্রবণ অঞ্চলে ভ্রমণের সময় সতর্ক থাকা।
  6. গর্ভবতী নারীদের বিশেষ সতর্কতা – গর্ভাবস্থায় জিকা আক্রান্ত অঞ্চলে না যাওয়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।


বাংলাদেশে জিকা ভাইরাস এখনো বড় ধরনের মহামারি আকারে দেখা দেয়নি, তবে ভবিষ্যতে এটি বড় হুমকি হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন ও মশার বিস্তার এই ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই এখন থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি, যেন এটি ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ার মতো বড় আকারে ছড়িয়ে না পড়ে। জনগণের সচেতনতা, মশা নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাস্থ্যবিভাগের কার্যকরী উদ্যোগই এই ভাইরাস প্রতিরোধের মূল উপায়।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.