শিশুদের জ্বর হলে মা-বাবার দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়। জ্বর সাধারণত শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া, যা শরীরকে ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে। তবে শিশুর জ্বর কমানোর জন্য কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে, যা শিশুকে আরাম দেবে এবং দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করবে। আসুন জেনে নিই কিছু কার্যকর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে।
শিশুর জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়
১. কুসুম গরম পানি দিয়ে স্পঞ্জিং
শিশুর শরীরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য কুসুম গরম পানি দিয়ে স্পঞ্জিং করা অত্যন্ত কার্যকর। গরম পানিতে একটি পরিষ্কার কাপড় ভিজিয়ে নিয়ে শিশুর হাত, পা, মুখ এবং শরীরে মুছিয়ে দিন। এতে শরীরের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমে যাবে। খুব ঠান্ডা পানি ব্যবহার করবেন না, কারণ এটি শরীরে বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
২. পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার দিন
জ্বর হলে শরীর থেকে প্রচুর পানি বের হয়ে যায়, যা শিশুকে ডিহাইড্রেটেড করতে পারে। তাই শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি, ফলের রস, নারকেলের পানি এবং সুপ জাতীয় তরল খাবার দিন। এতে শরীর ঠান্ডা থাকবে এবং জ্বরের জন্য হওয়া ক্লান্তিও দূর হবে।
৩. আদা এবং তুলসি পাতার চা
তুলসি পাতার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ, যা ইনফেকশন কমাতে সাহায্য করে। এক কাপ পানিতে কয়েকটি তুলসি পাতা এবং এক টুকরো আদা ফুটিয়ে চা তৈরি করুন। একটু ঠান্ডা হলে শিশুকে অল্প করে দিন। এটি শিশুদের জ্বর কমাতে সহায়ক হতে পারে। তবে শিশুর বয়স এক বছরের নিচে হলে এই চা এড়িয়ে চলুন।
৪. হলুদ দুধ
হলুদে থাকা কারকিউমিন প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপ্টিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। এক গ্লাস গরম দুধে আধা চামচ হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে শিশুকে খাওয়ানো যেতে পারে। এটি শিশুর শরীরকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবং তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
৫. পেঁয়াজ ব্যবহার
পেঁয়াজের টুকরো শিশুর পায়ের তলায় রেখে মোজা পরিয়ে দিলে জ্বর কমাতে সাহায্য করে। পেঁয়াজের শীতলকারী প্রভাব শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে দেয় এবং এটি অনেকেই প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহার করে আসছে।
৬. নারকেল তেল দিয়ে মালিশ
নারকেল তেল শরীরকে ঠান্ডা করতে সাহায্য করে। তাই নারকেল তেল হালকা গরম করে শিশুর শরীরে আলতো করে মালিশ করুন। এতে শরীরের উত্তাপ কমবে এবং শিশু আরাম পাবে।
৭. লেবুর রস ও মধু
লেবু ও মধুর মিশ্রণ জ্বরের সময় খুবই উপকারী। লেবুতে থাকা ভিটামিন সি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে অল্প লেবুর রস এবং মধু মিশিয়ে শিশুকে দিনে দু’বার খাওয়াতে পারেন।
৮. বিশ্রামের ব্যবস্থা
জ্বরের সময় শরীর ক্লান্ত ও দুর্বল হয়ে যায়, তাই শিশুকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে দিন। পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে, যা দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে।
৯. হালকা পোশাক পরানো
শিশুকে খুব বেশি পোশাক পরানো উচিত নয়। হালকা, আরামদায়ক পোশাক পরিয়ে রাখুন যাতে শরীরের তাপ বাইরে বের হতে পারে এবং জ্বর সহজে কমে যায়।
১০. লেবুর রস ও শসার রস দিয়ে মাথা মুছানো
শসার রস এবং লেবুর রস মিশিয়ে একটি পরিষ্কার কাপড়ে ভিজিয়ে শিশুর মাথা মুছিয়ে দিন। এতে শিশুর মাথার তাপমাত্রা কমবে এবং আরাম বোধ করবে।
সতর্কতাঃ
ঘরোয়া উপায়ে জ্বর কমানোর চেষ্টা করলেও জ্বর বেশি হলে বা তিন দিনের বেশি স্থায়ী হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া জরুরি। শিশুর জ্বরের সময় মুখে লেগে থাকা কোনো ওষুধ বা খাবার না দিলে ভালো, বিশেষ করে ব্যথার ওষুধগুলো নিজের থেকে না দিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
শিশুর জ্বর কমানোর জন্য ঘরোয়া উপায়গুলো কার্যকর হতে পারে, তবে সবসময় শিশুদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন থাকা জরুরি। ঘরোয়া চিকিৎসা শিশুদের জন্য নিরাপদ এবং তাদের শরীরে ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি বাড়ায়।