গর্ভধারণের প্রাথমিক লক্ষণগুলো জানা থাকলে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন, আপনি শীঘ্রই মা হতে চলেছেন কি না। এই লক্ষণগুলো সাধারণত গর্ভধারণের প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশ পায়। কিছু লক্ষণ সরাসরি দেখা গেলেও, কিছু লক্ষণ ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভরশীল। নিচে কয়েকটি প্রধান লক্ষণ দেওয়া হলো যেগুলো দেখে আপনি বুঝতে পারবেন মা হতে চলেছেন কি না।
গর্ভধারণের
প্রাথমিক লক্ষণসমূহ
মাসিক
বন্ধ হয়ে যাওয়া: এটি গর্ভধারণের প্রথম
এবং সাধারণ লক্ষণ। সাধারণত, যদি আপনার নিয়মিত
মাসিক থাকে এবং এটি
হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়,
তবে এটি গর্ভধারণের ইঙ্গিত
হতে পারে। তবে স্ট্রেস, হরমোনাল
ইমব্যালেন্স, বা স্বাস্থ্য সমস্যার
কারণেও মাসিক বন্ধ হতে পারে,
তাই নিশ্চিত হতে পরীক্ষা করা
ভালো।
মর্নিং
সিকনেস বা বমি ভাব: গর্ভধারণের শুরুর দিকে অনেক মহিলার
সকাল বেলা বমি বা
বমির ভাব হতে পারে।
এটি সাধারণত গর্ভধারণের প্রথম ২-৮ সপ্তাহের
মধ্যে দেখা যায় এবং
এই অবস্থাকে মর্নিং সিকনেস বলা হয়।
বুকের
আকার ও সংবেদনশীলতা বাড়া: গর্ভধারণের প্রথম দিকে অনেক মহিলার
বুকের আকার বড় এবং
ভারি অনুভব হতে পারে। এছাড়াও,
বুকের চারপাশের অংশ গাঢ় হয়ে
যেতে পারে এবং হালকা
ব্যথাও অনুভূত হতে পারে।
মুড
পরিবর্তন: হরমোনের পরিবর্তনের কারণে গর্ভবতী মহিলাদের মুড বা মনের
অবস্থা দ্রুত পরিবর্তিত হতে পারে। অল্পতেই
রাগ, দুঃখ বা আনন্দ
অনুভব করা গর্ভধারণের অন্যতম
লক্ষণ।
পেট
ফুলে যাওয়া: গর্ভধারণের প্রথম দিকে কিছু মহিলার
পেট সামান্য ফুলে যেতে পারে।
এটি হরমোনজনিত পরিবর্তনের কারণে হয় এবং গ্যাস
বা হজমে সমস্যার কারণেও
হতে পারে।
অতিরিক্ত
ক্লান্তি অনুভব করা: গর্ভধারণের প্রাথমিক পর্যায়ে শরীরে প্রোজেস্টেরন হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা
অতিরিক্ত ক্লান্তির কারণ হতে পারে।
আপনার যদি হঠাৎই অল্প
পরিশ্রমে ক্লান্তি অনুভব হয় তবে এটি
গর্ভধারণের লক্ষণ হতে পারে।
প্রস্রাবের
পরিমাণ বাড়া: গর্ভধারণের কারণে শরীরে বেশি প্রোজেস্টেরন এবং
অন্যান্য হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়, যা প্রস্রাবের পরিমাণ
বাড়িয়ে দিতে পারে। আপনি
যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি প্রস্রাব করতে
শুরু করেন তবে এটি
গর্ভধারণের ইঙ্গিত হতে পারে।
অস্বাভাবিক
ক্ষুধা বা খাবারের রুচি পরিবর্তন: গর্ভধারণের সময় খাবারের রুচিতে
পরিবর্তন আসতে পারে। কিছু
খাবার খেতে ইচ্ছা হতে
পারে আবার কিছু খাবার
দেখে বিরক্ত লাগতে পারে। এই ধরনের অস্বাভাবিক
ক্ষুধা বা অরুচি গর্ভধারণের
একটি অন্যতম লক্ষণ।
গর্ভধারণের
বিষয়টি নিশ্চিত করতে করণীয়
উপরের
লক্ষণগুলো দেখা দিলে আপনি
নিকটস্থ ফার্মেসি থেকে গর্ভধারণের পরীক্ষা
কিট সংগ্রহ করে পরীক্ষা করতে
পারেন। তবে, নিশ্চিত হওয়ার
জন্য ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে রক্ত পরীক্ষা
করানো সবচেয়ে ভালো।
গর্ভধারণের লক্ষণগুলো প্রত্যেক মহিলার ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে। কেউ কেউ সমস্ত লক্ষণ একসঙ্গে অনুভব করেন, আবার কেউ কেউ কেবলমাত্র একটি-দুটি লক্ষণ অনুভব করেন। তাই এই লক্ষণগুলোর ওপর ভিত্তি করে গর্ভধারণ নিশ্চিত না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ।
গর্ভধারণ সম্পর্কে সাধারণ জিজ্ঞাসা
১.
গর্ভধারণের লক্ষণগুলো কতদিন পর থেকে দেখা দিতে শুরু করে?
গর্ভধারণের লক্ষণগুলো সাধারণত গর্ভধারণের ১-২ সপ্তাহ
পর থেকে প্রকাশ পেতে
শুরু করে। তবে, প্রতিটি
মহিলার শরীরে এ লক্ষণগুলো প্রকাশের
সময় আলাদা হতে পারে।
২.
মর্নিং সিকনেস কবে থেকে শুরু হয়?
মর্নিং সিকনেস সাধারণত গর্ভধারণের ৪-৬ সপ্তাহের
মধ্যে দেখা যায়। তবে,
কিছু মহিলার ক্ষেত্রে এটি শুরু হতে
একটু দেরি হতে পারে
বা কিছু মহিলার ক্ষেত্রে
এই লক্ষণ একেবারেই থাকে না।
৩.
কীভাবে গর্ভধারণ নিশ্চিত হতে পারি?
ফার্মেসি থেকে গর্ভধারণের টেস্ট
কিট সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে
প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়। তবে,
সঠিক ও নির্ভরযোগ্য ফলাফলের
জন্য ডাক্তারের কাছে গিয়ে রক্ত
পরীক্ষা করানো ভালো।
৪.
গর্ভধারণের সময় কি ধরনের খাদ্য এড়িয়ে চলা উচিত?
কাঁচা মাংস, কাঁচা ডিম, অতিরিক্ত ক্যাফেইন,
ও এলকোহল গর্ভধারণের সময় এড়িয়ে চলা
উচিত। এগুলো ভ্রূণের স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে
পারে।
৫.
গর্ভধারণের প্রথম দিকে কোন ব্যায়ামগুলো করা নিরাপদ?
হালকা যোগ ব্যায়াম, হাঁটা,
এবং সাধারণ স্ট্রেচিং গর্ভধারণের প্রথম দিকে করা নিরাপদ।
তবে, ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়াম শুরু
করা উচিত।
৬.
গর্ভধারণের সময় কোন ওষুধ খাওয়া নিরাপদ?
গর্ভধারণের সময় ওষুধ খাওয়ার
আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কিছু
ওষুধ ভ্রূণের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে
পারে, তাই নিরাপদ ওষুধ
ব্যবহারের জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
নেওয়া জরুরি।
৭.
গর্ভধারণের সময় কি করে ভালো ঘুম নিশ্চিত করা যায়?
স্বাস্থ্যকর খাবার, নিয়মিত হালকা ব্যায়াম, আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করা এবং
শরীরের বাম পাশে ঘুমানো
ঘুম ভালো করতে সাহায্য
করতে পারে। ঘুমের সমস্যায় পড়লে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৮.
গর্ভধারণের সময় কারও কি বেশি করে ভিটামিন নিতে হয়?
হ্যাঁ, গর্ভধারণের সময় ফোলিক অ্যাসিড,
আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি
সহ অতিরিক্ত পুষ্টি দরকার। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট নেওয়া উচিত।
৯.
গর্ভধারণের সময় কী ধরনের ব্যথা সাধারণ?
কিছু ক্ষেত্রে তলপেট বা কোমরের সামান্য
ব্যথা হতে পারে। তবে,
যদি ব্যথা অত্যধিক বা ক্রমাগত হয়,
তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
১০.
গর্ভধারণের সময় কি কোনো ভ্রমণ করা নিরাপদ?
গর্ভধারণের প্রথম এবং শেষ তিন
মাসের মধ্যে দীর্ঘ ভ্রমণ এড়িয়ে চলাই ভালো। তবে,
প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের অনুমতি নিয়ে ভ্রমণ করা
যেতে পারে।