ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা:
ডেঙ্গু
একটি মশাবাহিত রোগ যা ডেঙ্গু
ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে। ডেঙ্গু
রোগে আক্রান্ত হলে রক্তে প্লেটলেটের
সংখ্যা কমে যায় এবং
শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। এই
সময়ে সঠিক খাদ্যাভ্যাস রোগীর
সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পুষ্টিকর
ও সঠিক খাবার রক্তে
প্লেটলেটের মাত্রা বাড়াতে এবং রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা শক্তিশালী করতে সহায়তা করে।
এখানে ডেঙ্গু রোগীর জন্য একটি সুস্থতার
জন্য প্রয়োজনীয় খাবারের তালিকা দেওয়া হলো:
১.
পানি এবং তরল
ডেঙ্গু
রোগীর শরীরে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা হওয়ার
সম্ভাবনা থাকে। তাই পর্যাপ্ত পানি
পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- পর্যাপ্ত পানি
- ডাবের পানি
- তাজা ফলের রস (বিনা চিনি)
- হারবাল চা
- ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ ওরস্যালাইন
২.
পেঁপে পাতা
পেঁপে
পাতার রস ডেঙ্গু রোগীর
প্লেটলেটের সংখ্যা বাড়াতে সহায়ক বলে প্রমাণিত হয়েছে।
এটি প্লেটলেট বৃদ্ধির পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বাড়াতেও সহায়তা করে।
- পেঁপে পাতার রস দিনে ২-৩ বার খাওয়া যেতে পারে।
৩.
তাজা ফল
ডেঙ্গু
রোগীদের জন্য তাজা ফল
অত্যন্ত উপকারী। এতে থাকা ভিটামিন,
মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রোগীর শক্তি
বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- পেঁপে
- আপেল
- কমলা
- কিউই
- ডালিম (যা প্লেটলেট বৃদ্ধি করতে সহায়ক)
- আঙ্গুর
- পেয়ারা
৪.
শাকসবজি
শাকসবজিতে
থাকা ফাইবার, ভিটামিন, এবং খনিজ পদার্থ
রোগীর স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে। এছাড়া এগুলো
সহজপাচ্য হওয়ার কারণে রোগীর হজম প্রক্রিয়াও ভালো
থাকে।
- পালং শাক
- ব্রকোলি
- গাজর
- লাউ
- শশা
৫.
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
প্রোটিন
প্লেটলেট এবং সাদা রক্তকণিকা
উৎপাদনে সহায়তা করে, যা রোগীর
ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে। ডেঙ্গু
রোগীদের জন্য প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার
অত্যন্ত জরুরি।
- ডাল এবং মসুর
- ডিমের সাদা অংশ
- মুরগির মাংস (চর্বি ছাড়া)
- মাছে ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ মাছ (স্যামন, সার্ডিন)
৬.
স্যুপ এবং ব্রথ
হালকা
এবং পুষ্টিকর স্যুপ ডেঙ্গু রোগীর জন্য খুবই উপকারী।
এটি সহজে হজম হয়
এবং শরীরে পুষ্টি সরবরাহ করে।
- চিকেন ব্রথ
- শাকসবজি স্যুপ
- মসুরের স্যুপ
৭.
ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার
ভিটামিন
সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বৃদ্ধি করে এবং শরীরের
সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে। ডেঙ্গু রোগীদের
দ্রুত সুস্থতার জন্য ভিটামিন সি
সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
- কমলা
- লেবু
- পেয়ারা
- ব্রকলি
- কিউই
৮.
ফ্ল্যাক্স সিডস এবং চিয়া সিডস
এগুলোতে
ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
রয়েছে যা রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরে প্রদাহ
কমাতে সহায়ক।
- চিয়া সিডস এবং ফ্ল্যাক্স সিডস সালাদ বা স্মুদি তে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
৯.
বাদাম এবং শস্য
বাদাম
এবং পুরো শস্য রোগীর
শক্তি বাড়ায় এবং দ্রুত সুস্থ
হতে সহায়তা করে। এগুলো শরীরের
ভিটামিন এবং খনিজের ঘাটতি
পূরণ করে।
- আখরোট
- কাঠ
৯.
বাদাম এবং শস্য
বাদাম
এবং পুরো শস্য রোগীর
শক্তি বাড়ায় এবং দ্রুত সুস্থ
হতে সহায়তা করে। এগুলো শরীরের
ভিটামিন এবং খনিজের ঘাটতি
পূরণ করে।
- আখরোট
- কাঠবাদাম
- ওটস
- ব্রাউন রাইস
- চিয়া সিডস
ডেঙ্গু
রোগীদের দ্রুত সুস্থতার জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাস
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পানি এবং তরল
জাতীয় খাবার, পেঁপে পাতা, তাজা ফল, শাকসবজি,
প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার এবং ভিটামিন সি
সমৃদ্ধ ফল রোগীকে দ্রুত
আরোগ্য লাভ করতে সাহায্য
করে। পাশাপাশি, প্রক্রিয়াজাত ও তেল চর্বিযুক্ত
খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। একজন
ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সঠিক খাদ্য পরিকল্পনা
তৈরি করাই সর্বোত্তম।
সতর্কতা: ডেঙ্গু রোগীর জন্য খাবার ও যত্ন
ডেঙ্গু রোগীদের যত্ন নেওয়ার সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। সঠিক খাবার এবং যত্ন রোগীকে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করে, তবে কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন:
১. পানি স্বল্পতা এড়ানো
ডেঙ্গু রোগীর শরীরে ডিহাইড্রেশন হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে, তাই প্রচুর পানি ও তরল পান করা জরুরি। তবে বাজারের চিনিযুক্ত পানীয়, সোডা, বা কোল্ড ড্রিঙ্কস এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।
২. তেল চর্বিযুক্ত খাবার এড়ানো
তেল, ভাজা খাবার এবং ফাস্ট ফুড পরিপাক প্রক্রিয়াকে ধীর করে এবং শরীরে প্রদাহ বাড়ায়, যা রোগীর সুস্থতার জন্য ক্ষতিকর। তাই এসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
৩. মশলাযুক্ত খাবার পরিহার করা
ডেঙ্গুতে রোগীর হজম ক্ষমতা কমে যেতে পারে, তাই মশলাযুক্ত বা খুবই ঝাল খাবার খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে। সহজপাচ্য এবং হালকা খাবার খাওয়ানো ভালো।
৪. প্রচুর বিশ্রাম
ডেঙ্গু রোগীর শরীর খুব দুর্বল হয়ে যায় এবং রোগীকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। বিশ্রামের অভাব রোগীর পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করতে পারে।
৫. নিজের ইচ্ছায় ওষুধ সেবন না করা
ডেঙ্গু রোগীর ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা উচিত। নিজে নিজে ওষুধ সেবন করলে প্লেটলেটের মাত্রা কমে যেতে পারে এবং জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেন জাতীয় ওষুধ এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এগুলো রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
৬. স্বাস্থ্যপরীক্ষা এবং প্লেটলেট পর্যবেক্ষণ
ডেঙ্গু রোগীর প্লেটলেট কাউন্ট নিয়মিত পরীক্ষা করা জরুরি। প্লেটলেটের মাত্রা খুব কমে গেলে হাসপাতাল বা ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ডেঙ্গু রোগীর সঠিক খাদ্য ও যত্ন নিশ্চিত করার পাশাপাশি উল্লিখিত সতর্কতাগুলো মেনে চললে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে। পর্যাপ্ত পানি পান করা, হালকা ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া ডেঙ্গু রোগীর পুনরুদ্ধারে সহায়ক।